ভোরবেলা বাড়ীর পাশে মসজিদে জামায়াতের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন আলিম উদ্দীন বীনা (৫১)। সালাম ফেরানোর সময় পিছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী কোপ দেওয়া শুরু করে তার ভাতিজা ইউনুস আলী (২২)। সালাম ফিরিয়ে ভাতিজাকে আটকানোর আগেই আলিম উদ্দীনের ওরফে বীনার এক হাতের কবজি শরীর থেকে আলাদা এবং মাথার অর্ধেক অংশ কেটে গেছে।

 

রবিবার (৪ ফ্রেরুয়ারী) ভোরবেলা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের ঠনঠনিয়া পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের লোকজন আলিম উদ্দীনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। রবিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত জ্ঞান ফিরেনি চাচার।

 

এদিকে ভাতিজা ইউনুস আলীকে আটক করে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে পরিবারের লোকজন ও মসজিদের নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা। এ ঘটনায় ভাতিজার কঠিন শাস্তির দাবি তার পরিবার ও এলাকাবাসীর।

 

আহত আলীম উদ্দীন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের ঠনঠনিয়া পাড়া গ্রামের মৃত দবির উদ্দীনের ছেলে। ঘাতক ইউনুস আলী তার ভাই সাহাবুদ্দিনের ছেলে।

 

দুই বছর ধরে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় বসে থাকা ঘাতক ইউনুস আলীর বাবা সাহাবুদ্দিন জানান, গতকাল শনিবার সকালে ইউনুস আলী তার স্ত্রীর কাছে টাকা চাইলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এতে বাধা দিলে আমাকে লাথি মারে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে। এনিয়ে শালিস বৈঠকে বসলে চাচা আলিম উদ্দীন ভাতিজাকে ধমক দিয়ে বেধে রাখতে বলেন। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে যায় ভাতিজা ইউনুস আলী।

 

‌’শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোমড়ে চুল কাটা কাঁচি নিয়ে বেশ কয়েকবার মসজিদে ও চাচার বাড়ীতে খুঁজতে যায় ইউনুস আলী। পরে না পেয়ে রাত পর্যন্ত বাড়ীতে গালিগালাজ করে। আত্মীয় হওয়ার সুবাদে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাতে এসে সাবধান করে দিয়ে যায়। আমরা মনে করেছিলাম শান্ত হয়ে যাবে’।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফজরের নামাজ দু’রাকাত ফরজ নামাজের শেষ সালাম ফিরাচ্ছিলেন ইমাম। পিছন থেকে এসে চাচার মাথায় কোপ মারে ইউনুস, পরের বার আবার কোপ মারলে হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছিলেন চাচা আলিম উদ্দীন। পরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হাতের কবজি কেটে পড়ে যায়।

 

মুসল্লিরা পরিবারকে খবর দিলে স্বজনরা উদ্ধার করে প্রথমে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল এবং সবশেষ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা চলছে। তবে বিকাল পর্যন্ত জ্ঞান ফিরেনি।

 

স্থানীয় স্কুল হাট বাজারে একটি হোটেলে কাজ করতো ইউনুস আলী। হোটেল মালিক জানায়, মাঝে মাঝেই কাজ করার অবস্থায় হাত পা অবস হয়ে পড়ে যেতো সে। মাথায় সমস্যাও ছিলো। তবে পরিবারের লোকজন বলছে, আয় রোজগার না থাকায় বাবার সাথে জমি ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়শই ঝগড়া লেগে থাকতো ইউনুসের। এর আগেও বেশ কয়েকবার বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর করেছে ইউনুস।

 

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) মামুন অর রশিদ জানান, ঘটনার পর ঘাতক ভাতিজাকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে জানান তিনি।